প্রকাশিত: ২১/০৬/২০১৯ ৮:১৪ এএম

একটা সময় ছিল তরুণ ব্রিটিশ মুসলমানরা মসজিদে অনেক বেশি সময় কাটাতো। সেখানে পাকিস্তানি বা বাংলাদেশি ইমামদের বক্তব্য শুনতো। এখন এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীকে অন্য কাজ ফেলে মসজিদে যেতে হয় না। তাদেরকে অন্যের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না।

গত দুই দশকে ডিজিটাল বিশ্ব আধুনিক জীবনে বেশ কিছু সুযোগ এনে দিয়েছে। তারা এখন গুগল, ইউটিউব এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই পেয়ে যায় বিভিন্ন লেকচার। ফলে পড়াশুনা ও নিজস্ব বিবেচনাবোধকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই এখন স্বশিক্ষিত। মুসলিম সাংবাদিক হুসেন কেসভানির বই ‘ফলো মি, আখি’-তে এসব বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বইটি আদতে উদারনৈতিক ইসলামে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকার বয়ান। বইটিতে স্থান পেয়েছে মুসলমান ও অনলাইন বিশ্বের মধ্যকার সম্পর্ক।

ফলো মি, আখি, সাংবাদিক হুসেন কেসভানির প্রথম বই ‘ফলো মি, আখি’কে বাংলা করলে দাঁড়ায়- আমাকে অনুসরণ করো, হে আমার মুসলিম ভাই!

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, দেশটিতে প্রায় ৩৪ লাখ মুসলমান রয়েছে যার অর্ধেকের বয়স ২৪ বছরের নিচে। ২৭২ পৃষ্ঠার বইটিতে কেসভানি তুলে ধরেছেন দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠীর এই প্রজন্মের একটি রেখাচিত্র। এতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পরিচ্ছন্নতা, লিঙ্গ বৈষম্য, সমকামিতাসহ তাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে।

বইটি রচনার আগে কেসভানি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেছেন। তিনি অনুসন্ধান করেছেন কেন অনেক ব্রিটিশ মুসলিম তরুণ আইএস’র মতো সংগঠনে যোগ দিয়েছে কিংবা মুসলিম চরমপন্থিদের দলে নাম লিখিয়েছে।

হুসেন কেসভানি তাঁর ‘ফলো মি, আখি’ বইয়ে লিখেছেন, ২০১৪ সালে হজ করতে মক্কায় জড়ো হন প্রায় ২০ লাখ মুসলমান। ওই বছর সেখানে কিছু নতুন দৃশ্যের অবতারণা হয়। মক্কার প্রাচীন সর্ববৃহৎ মসজিদের সামনে, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে তরুণ ধর্মপ্রাণদের সেলফি তুলতে দেখা যায়। এসব ছবি তারা পোস্ট করেন টুইটারে। #HajjSelfie নামের পেইজ ভাইরাল হয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।

হজ কিংবা মুসলমানদের বৃহৎ সম্মেলনে আলেমদের ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায় না এখনও। তাঁদের কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে কথাও বলেন। জেদ্দাভিত্তিক এক আলেম বলেন, হজ করতে এসে ছবি তোলা হজের প্রাণই নষ্ট করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ফটোগ্রাফি ও ভিডিও ধারণ আমাদের মহানবীর আদর্শের বিরুদ্ধে। ইসলাম শিক্ষার একজন শিক্ষক বলেন, কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ শৃঙ্খলা ধ্বংস করে ফেলছে।’

ডিজিটাল বিশ্বেও একটি শক্তিশালী উপাদান মানুষের ধর্মবিশ্বাস। এখনও অনেক মানুষ অজ্ঞেয়বাদে (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর বাইরে যা আছে, মানুষের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়-এই মত) বিশ্বাস করে। কিন্তু খ্রিস্টান, ইহুদি এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো ইসলামও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা নিতে পারে। ইউটিউবে দ্বিতীয় বৃহৎ ক্যাটাগরি হলো ধর্মবিষয়ক ভিডিও। অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসের তুলনায় ইসলাম সম্পর্কিত ভিডিও এখন ইউটিউবে অনেক বেশি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২ সালে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজারেরও বেশি ইসলামী জীবনধারা এবং ইসলাম সম্পর্কিত ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে ইউটিউবে।

মুসলমানরা এখন ইসলাম সম্পর্কিত লক্ষ লক্ষ রায় এবং ফতোয়া সম্পর্কে জানতে পারে, মন্তব্য করতে পারে এবং বিতর্কে অংশ নিতে পারে। প্রতিদিন বিভিন্ন ভাষায় অ্যালকোহল, গৃহস্থালি পণ্য থেকে যৌনতা সম্পর্কিত উপদেশ পর্যন্ত নানা বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। আলেম দাবিদার কেউ কোনও ফতোয়া দিলে তার ভালো-মন্দের বিষয়টিও পাঠকের সামনে হাজির হয়।

ফেসবুক চালু হওয়ার পর ১৫ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো যে নারী ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে প্রগতি বা সংস্কারবাদী মনোভাব প্রদর্শন করছে- তাতে প্রযুক্তিবিদদেরও হিসেব করে পা ফেলতে হচ্ছে। এসব বিবেচনায় ‘ফলো মি, আখি’ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ যাতে নানা মতাদর্শের অনুসরণে ধর্ম ও ডিজিটাল গণতন্ত্র একতাবদ্ধ হতে উৎসাহ যোগায়।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

পাঠকের মতামত

তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ

ইসলামী ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজড়িত তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৯ম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ, ...